চট্টগ্রামের মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষজন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এক বেলার খাবার দুই বেলায় খেয়ে জীবন ধারণ করছেন পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকে। এক আঁটি শাকও বাজারে ৩০ টাকার নিচে মিলছে না। সাধারণ সবজির মূল্য কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে। চালের দামও বাড়ছে। আয় কমলেও বেড়েছে ব্যয় করোনার পরিস্থিতিতে। অনেকের বেতন বন্ধ, অনিয়মিত বা অর্ধেক হয়ে যাওয়ার চরম দুর্বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
লক্ষ্য করা গেছে চট্টগ্রাম মহানগরী বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্য এবং ক্রেতাদের দুর্ভোগের চিত্র। চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর গেট কর্ণফুলী মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে নিত্যপণ্য শাকসবজি কিনতে রীতিমত খাবি-খাচ্ছে মানুষ।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সাধারণ মানের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, আলু ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটল ৬৫ টাকা, শিম ১৩০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১২০টাকা কেজি দরে বাজারে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে। অস্থিরতা বাজারে মাছের মূল্যেও চলছে। মিলছে না ইলিশ মাছ হাজার টাকা কেজির নিচে, চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, রুই ২২০-৩৫০ টাকায়, রূপচাঁদা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, নাইলেটিকা ১৩০ টাকা, কৈ ৩০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকা, সামুদ্রিক পোয়া মাছের কেজি ২০০ টাকা, লইট্টা মাছ ১৩০ টাকা। পাঙ্গাস ১২০ টাকা, পাবদা ৪৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাজারে বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা রবিন হোসেন বলেন, আমাদের চরম দুরাবস্থার মধ্যে ফেলেছে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না বাজারে। ৯০ টাকা পেঁয়াজের কেজি। সাধ্যই নেই মাছ-মাংস কেনার। বাজারে প্রতিটি পণ্যে অস্বাভাবাকি মূল্যের কারণে এখন এক বেলার আহার দিয়ে দুই বেলা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করতে হবে এ অবস্থা চলতে থাকলে।
এদিকে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি এবং আমদানি প্রসঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ জানান, পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে থাকে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই। বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে সীমিত পরিমাণে। এছাড়া ভারতের বিকল্প দেশ পাকিস্তান, মিশর, মিয়ানমারসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি মূল্য প্রায় ৭০ থেকে ৭২ টাকা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকরা। ৯০টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে গিয়ে। বিশ্বব্যাপী পেঁয়াজের মূল্য কমলে এবং আমদানি বাড়লে দেশে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে এ ব্যবসায়ী নেতা মন্তব্য করেন।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ জানান, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও বাজার মনিটরিং করছে একই সঙ্গে। ফয়েজ উল্লাহ জানান, প্রদর্শন না করা মূল্য তালিকা, অতিরিক্ত মূল্য আদায় করাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রতিদিনই বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সতর্ক করা হচ্ছে বলে।