বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশ্ব নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে এখনো ভাবনা শেষ হয়নি চীন, রাশিয়া, তুরস্ক ও ব্রাজিলের। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি এই দেশগুলোর পক্ষ থেকে এখনো। এর পেছনে কারণ জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।
ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল ক্রেমলিন ২০১৬ সালে। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাইডেনের প্রতি এখনো শুভেচ্ছা জানাননি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন সোমবার (৯ নভেম্বর) নির্বাচনের ফল নিয়ে মন্তব্য করার আগে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনের ফলের জন্য অপেক্ষা করবে মস্কো। প্রেসিডেন্টের মেয়াদকালে ট্রাম্প একাধিকবার পুতিনের প্রশংসা করেছেন। এর আগের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্য ছিল বলেও গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু সে সম্পর্ক প্রত্যাশা করা যায় না এবার বাইডেনের সঙ্গে।
বাইডেন বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে
কারিন ভন হিপ্পেল প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বলেন, বাইডেন সহযোগী ও মিত্রদের সঙ্গে কাজ করবে। তা ঠেকাতে চেষ্টা করবে, রাশিয়া যত দূর এগিয়েছে। বিদেশে রাশিয়ান নাগরিক হত্যা, সিরিয়া, ক্রিমেরায় তাদের কর্মকাণ্ড, সার্বিয়ায় প্রতিপক্ষকে হত্যাচেষ্টার মতো কাজগুলোয় বাধা দেবে। ভালো করেই জানেন পুতিন, রাশিয়ার প্রচেষ্টা ঠেকাতে উদ্যোগী হবে বাইডেন সরকার। তিনি রাশিয়ার জন্য নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবেন। গত অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া হচ্ছে মার্কিন নাগরিকদের জন্য মূল হুমকি।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং
নির্বাচনের সময় চীনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেও নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানাতে দেরি করেনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ২০১৬ সালের। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টেকসই সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, মানবাধিকার নিয়ে সম্পর্ক ভালো যায়নি। অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে বিস্তারবাদের। চীনকে দায়ী করেছে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য। এ প্রেক্ষাপট থাকলেও বাইডেনকে দ্রুত শুভেচ্ছা জানাননি সি। চীন সরকার বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানানোসংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, চীন আন্তর্জাতিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবস্থা নেবে।
কেন বেইজিং তড়িঘড়ি শুভেচ্ছা জানাচ্ছে না, তার কারণ বের করা কঠিন কিছু নয়। ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, বাইডেন তার চেয়ে আরো কঠোর হতে নিজের দক্ষতার বিষয়ে গর্ব করেছিলেন। হিপ্পেল বলেছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য নয় বেইজিং। বিশেষত, এখন তারা অপ্রত্যাশিত নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কম মনে করবে। ট্রাম্পের সময়ের মতো কিছুটা ধারাবাহিকতা বেইজিংয়ের উপকারেও আসতে পারে। চীনের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও বেশ কিছু বিষয়ে চীনের নীতিতে কাজ করতে পারে বাইডেন প্রশাসন। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন বা উত্তর কোরিয়ার মতো বিষয়।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
ট্রাম্পের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও। ট্রাম্প এরদোয়ানের সব কাজেই সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু তা করবেন না হয়তো বাইডেন। বাইডেনকে তাই এখনো শুভেচ্ছা জানাননি এরদোয়ান। গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসকে বাইডেন বলেছিলেন, তুরস্কের বিষয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। তিনি ভিন্ন পথ অবলম্বন করবেন দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে। এরদোয়ানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো চোখে দেখেন না বাইডেন। এর আগে এ নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন তিনি।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো
‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’ হিসেবে পরিচিত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারো। ট্রাম্পের মতোই করোনাভাইরাসকে পাত্তা দেননি তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর একটি ব্রাজিল। কিন্তু ট্রাম্পের হেরে যাওয়ায় একজন বন্ধু হারাবেন বোলসোনারো। তাকে এমন এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হতে হবে, যিনি মানবাধিকার ও পরিবেশের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বোলসোনারোর জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর আগে বাইডেন আমাজন রক্ষায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বোলসোনরো।