সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করোনার সময়ে। পড়াশোনা থেকে বলতে গেলে প্রায় বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীরা বাসায় বন্দি। কিন্তু থেমে থাকছে না সময় তো আর। মাহমুদা আক্তার মিষ্টি কীভাবে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের বাসায় বসে পড়াশোনাতে আগ্রহী করা যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকেন নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক । শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার উপায় খুঁজতে থাকেন তিনি।
তিনি একদিন বিষয়টি ফুলবাড়ীর দেশসেরা তেতাল্লিশের শিক্ষক শিরিন বকুলকে জানান। মাহমুদাকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। বিষয়টা মাহমুদা আক্তারের ভাল লাগে কিন্তু প্রথমে তিনি এই বিষয়ে নার্ভাস ছিলেন। তা বুঝতে পারছিলেন না কীভাবে কী করবেন। তারপর একটা ভিডিও করে ফেলেন একদিন সাহস করে পঞ্চম শ্রেণির গণিত বিষয়ে। তার মেয়ে রিফা একাজে তাকে সহযোগিতা করে। সেই যে শুরু এরপর আর থেমে থাকেননি মাহমুদা। একের পর এক অনলাইনে ক্লাস নিয়ে চলেছেন তিনি। তার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন ক্লাস উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে।
অভিভাবক নাজমা ফারুকী বলেন, ‘চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আমার মেয়ে অনন্যা। সে খুব অস্থির হয়ে উঠেছিল করোনার সময় ঘরে বন্দি থেকে। পড়াশোনা তো করতেই চাইতো না। মিষ্টি আপা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন একদিন জানতে পারি। এরপর মেয়েকে সেই ক্লাসে যুক্ত করি। অনলাইন ক্লাসে গণিত, ইংরেজিসহ সকল বিষয় আমার মেয়ে পড়ে। এখানে সব বিষয় বোঝানো হয় খুব সহজ করে।’
আড়ানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. আফিফা তাবাসসুম বলে, ‘আমার খুব ভালো লাগে মিষ্টি আপার অনলাইনে ক্লাস করতে। খুব সুন্দর করে প্রতিটি বিষয় বুঝিয়ে দেন তিনি। এরপরেও যদি কোনো বিষয়ে সমস্যা হয় তো আমি ফোন করে তার সমাধান জেনে নেই। আমার বাবা আমাকে সহায়তা করেন এ কাজে।’
এ বিষয়ে মাহমুদা আক্তার মিষ্টি জানান, প্রথমে আমি পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, সমাজ, বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান এবং ধর্ম ফোনে হোমওয়ার্ক দিতাম।ফোনে মেসেঞ্জারে দিতাম ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পড়া সকলের। শিক্ষার্থীরা ঠিক ওভাবেই সেগুলো ফলো করতো যেগুলো হোমওয়ার্ক দিতাম। যেসব পড়া তাদের সমস্যা মনে হতো, সেগুলোর ছবি তুলে ফোনে আমাকে পাঠিয়ে দিত। আমি মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিতাম সেগুলোর সমাধান করে। আমি লক্ষ্য করলাম আমার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছেন হোমওয়ার্কগুলো যখন ফেসবুকের টাইমলাইনে দিতে শুরু করলাম। এরপর আমি অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করি। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ক্লাস নিয়েছি। এ বিষয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও জানান, এই কাজে ফুলবাড়ীর শিক্ষক শিরিন বকুল আপা, ফরিদপুরের সুমনা রায় রিপা দি, বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেজের প্রতিষ্ঠাতা কিশোরগঞ্জের অসীম কুমার সেন স্যার আমাকে উৎসাহ দিতেন। তাদের উৎসাহে আমি সাহস পাই। এরপর আমি বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেইজে লাইভ ক্লাস নেই। আমি বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছি সেখানে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে সাড়া পেয়েছি তাতে। এই ক্লাসগুলো থেকে উপকৃত হবে আমার বিশ্বাস ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ।’ তিনি অনলাইন স্কুলে পাঠদানে বেশ কয়েকটি সার্টিফিকেটও পেয়েছেন যা তার কাছে মূল্যবান বলেও জানান এই মেধাবী শিক্ষক।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম মোস্তফা জানান, করোনাকালে শিক্ষক মাহমুদা আক্তারের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি বেশ সময়পোযগী। অল্প সময়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সাফল্য কামনা করি তার।